শিরোনাম

বগুড়ায় ককটেল তৈরির গোপন কারখানা: দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের অভিযোগ

বগুড়া প্রতিনিধিঃ

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইটালী গ্রামে ককটেল তৈরির একটি গোপন কারখানার সন্ধান মিলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অলেদা বাজার সংলগ্ন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত নাসিমার বাড়ি থেকে দুই দফায় মোট ৪৫টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত ২ নভেম্বর রবিবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে বাড়িটিতে প্রথম বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর পরপরই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক। ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বোমা ডিসপোজাল ইউনিট পাঁচটি ককটেল নিষ্ক্রিয় করে।

২ নভেম্বর রবিবারের ঘটনায় কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রশাদের চর এলাকার বাদশার ছেলে আতাউর রহমান সেলিম গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে, পুলিশ আহত সেলিমকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

ঘটনার পরপরই গাবতলী মডেল থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে আহত সেলিমকে গ্রেফতার দেখায়

এর ঠিক দুই দিন পর ৪ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে, একই বাড়িতে আবারো তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় আরও ৩৯টি ককটেল। এগুলোও সেনাবাহিনীর বোমা ডিসপোজাল ইউনিট নিষ্ক্রিয় করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান,“একই বাড়ি থেকে যখন দুই দফায় ৪৫টি ককটেল পাওয়া যায়, তখন বিষয়টি সন্দেহজনক। সম্ভবত বাড়িটিকে ককটেল তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।”

এ বিষয়ে গাবতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেরাজুল ইসলাম বলেন,“ গত ২ নভেম্বরের বিস্ফোরণে যিনি আহত হয়েছেন, তাকে পুলিশি পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি সুস্থ হলে তার জবানবন্দিতেই জানা যাবে ককটেলগুলোর উদ্দেশ্য কী ছিল।”

ওসি আরও জানান,“ওই বাড়িটি ককটেল তৈরির কারখানা—এমন মন্তব্য এখনই করা যাবে না। আতঙ্কে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। আমরা কারো বক্তব্যে কান দিচ্ছি না। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।”

তবে পুলিশের এই ধীর পদক্ষেপে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে — অনেকে বলছেন, এমন বড় ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার হলে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা প্রত্যাশিত।”

উঠছে বড় প্রশ্ন:

১) একই বাড়ি থেকে বারবার ককটেল উদ্ধার — এটি কি আত্মঘাতী বা সন্ত্রাসী হামলার প্রস্তুতি ছিল?

২) এমন বিপজ্জনক সামগ্রী কোথা থেকে সংগ্রহ হচ্ছে, এবং কারা জড়িত?

৩) তদন্ত কি যথেষ্ট জোরালো ও স্বচ্ছ হবে নাকি লোকালয়ের ভয়-শর্তিত তথ্যকে নীরবতা কভার করবে?

স্থানীয়রা দ্রুত এবং সম্মিলিত তদন্ত, গ্রেপ্তার ও কঠোর আইনি ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন। প্রশাসন যদি দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এ ধরনের গোপন কারখানা দেশের নিরাপত্তাকে সরাসরি হুমকিতে ফেলতে পারে—এটি আর কোনো লাফ-ঝাঁপের অভিযোগ নয়, বাস্তব এবং তাৎক্ষণিক ঝুঁকি।

দুই দফায় ৪৫টি ককটেল উদ্ধার কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটি কি গোপন কারখানা—তা এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি, তবে সন্দেহের প্রমাণ যথেষ্ট। সরকারি সংস্থার দ্রুত পদক্ষেপ, স্বচ্ছ তদন্ত এবং সত্য উদঘাটনের মধ্যেই এলাকার নিরাপত্তা নির্ভর করছে।

No comments