শিরোনাম

বগুড়া 'অরক্ষিত' পৌর পার্ক রাতে ভয়ংকর

বগুড়া প্রতিনিধিঃ

সন্ধ্যা নামলেই শহরের শতবর্ষের প্রাচীন পৌর পার্ক এখন পরিণত হয় মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের আড্ডাখানায়। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাই, চুরি, প্রতারণা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মতো ঘটনা। ভয়ে সন্ধ্যার পর কেউ আর পার্কের দিকে যেতে চান না।

কয়েকদিন সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের দক্ষিণ গেইটের প্রাচীর ও লোহার গ্রিল দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত। ফলে যে কেউ যখন খুশি পার্কে প্রবেশ করতে পারে। অন্ধকার নামার পর থেকেই শুরু হয় মাদকসেবীদের আড্ডা, প্রেমিক যুগলদের অবস্থান, প্রতারণা আর ছিনতাইয়ের মতো কর্মকাণ্ড। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিদিনই এখানে ঘটে কোনো না কোনো অপরাধের ঘটনা।

গত মাসের শেষ দিকে সন্ধ্যার সময় চাকু দেখিয়ে মোবাইল ফোন ও পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, ১০–১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল নিয়মিত এই এলাকায় ছিনতাই করে।

গত রবিবারেও পার্কসংলগ্ন একটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। দোকান থেকে প্রায় ৩২০০ টাকার সিগারেটসহ মোট পাঁচ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোরেরা। দোকানটি দক্ষিণ গেইটের একদম পাশে।

স্থানীয় দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, 'এই মাসের শেষ দিকে সন্ধ্যার সময় ছিনতাইকারীরা চাকু দেখিয়ে আমার কাছ থেকে মোবাইল আর পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। ওরা ১০–১৫ জনের একটা দল ছিল। এখন সন্ধ্যা হলেই ভয় লাগে দোকান বন্ধ করতে।'

অভিযোগ রয়েছে, রাতে পার্কের ভেতরে বিভিন্ন প্রতারক চক্রও সক্রিয় থাকে। তারা প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রেমিক যুগলদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ও করে। আবার কেউ কেউ ব্ল্যাকমেইল করে মোবাইলের ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায় করে নেয়। এদের বেশিরভাগের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।

সোহেল মিয়া, নিয়মিত হাঁটতে আসেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন সকালে হাঁটতে আসি, কিন্তু রাতে এখানে আসা মানে বিপদ ডেকে আনা। পার্কে এখন ছিনতাই আর মাদকসেবীদের আড্ডা বেড়েছে।

ডায়াবেটিস রোগী মিনা আক্তার। তিনি বলেন, ভোরবেলা হাঁটাহাঁটির পরিবেশ ভালো, কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে ভয় লাগে। মেয়েরা একা এলে নানা রকম উত্যক্তের শিকার হয়।

নাসিম ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, রাত নামলেই পার্কটা অপরাধীদের আড্ডাখানা হয়ে যায়। অনেকে মাদক বিক্রি করে, আবার কেউ প্রেমিক যুগলদের ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়।

পার্কের ভেতরে উঁচু টিলার মতো জায়গায় চলে মাদকসেবীদের আসর। গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক সেবন ও বিক্রি চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।

গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর থেকে পার্কের দক্ষিণ গেইটের নিরাপত্তা প্রাচীরের লোহার গ্রিল চুরি হয়ে যায়। এরপর থেকেই পুরো দক্ষিণ দিকটি খোলা পড়ে আছে। ফলে রাতে অবাধে প্রবেশ করছে ছিনতাইকারী ও অপরাধীরা।

একজন নিরাপত্তারক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সাতজন গার্ড মিলে যতটা পারি পাহারা দিই। কিন্তু দক্ষিণ দিকের লোহার গ্রিল চুরি হয়ে যাওয়ার পর থেকে সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। রাত ৯টার পরও অনেকে ঢোকে, পুলিশও খুব একটা আসে না।

এদিকে, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কে অনেকেই হাঁটতে ও শরীরচর্চা করতে আসেন। ডায়াবেটিক রোগী ছাড়াও স্বাস্থ্যসচেতন নারী-পুরুষরা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। পার্কের অভ্যন্তরে ‘সুবেহ সাদিক’, ‘সুস্থ জীবন’ ও ‘ইয়োগা সেন্টার’ নামে কয়েকটি সংগঠনও সক্রিয় রয়েছে।

বগুড়া পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাহান আলম বলেন, দক্ষিণ পাশে বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় পার্কটি অরক্ষিত রয়েছে৷ কয়েকজন গার্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে পার্কটি নিরাপদ রাখতে। তবে বাউন্ডারি ওয়াল হয়ে গেলে পার্কটি আবার নিরাপদ হয়ে উঠবে।  

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর বলেন, ' বগুড়া পৌর পার্কে পুলিশের নিয়মিত টহল আছে। প্রয়োজনে টহল আরও বাড়ানো হবে।' 

বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক মাসুম আলী বেগ বলেন, 'প্রকল্পের মাধ্যমে বাউন্ডারি ওয়াল তৈরীর উদ্যোগ পাস হয়েছে৷ খুব শীঘ্রই এটার কাজ শুরু হবে৷ পার্কের ভেতরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পৌরসভা ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করবে।'

No comments