ব্রাকসু নির্বাচন বানচালে অপচেষ্টা চালাচ্ছে কিছু মহল, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের
রুশাইদ আহমেদ, বেরোবি:
দীর্ঘ দেড় যুগ প্রতীক্ষার পর চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে তা বানচালের হীন উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু মহল অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন তারা।
এ সময়, শিক্ষার্থীরা জানান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্রাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। দীর্ঘ লড়াই, সংগ্রাম, শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগ ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর গত ২৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে মহামান্য চ্যান্সলরের আদেশক্রমে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯’-এ এটি সংযুক্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
তারা বলেন, “ইতিপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, গেজেট প্রকাশ পেলেই ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হবে। কিন্তু গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানায়। উপাচার্য মহোদয়ও এ বছরই ব্রাকসু নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দেন এবং আজকের সিন্ডিকেট সভায় নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি—একটি মহল ছাত্র সংসদ আইন সংশোধনের দাবি তুলে নির্বাচন বিলম্বিত ও বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।”
তারা আরও বলেন, “আমরা স্বীকার করি, আইনটি শতভাগ নিখুঁত নয়; কিছু জায়গায় সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে বটে, তবে তা নির্বাচন আয়োজনের অন্তরায় নয়। ব্রাকসু প্রতিষ্ঠার পর আইনটি প্রয়োজনমতো সংশোধন করা সম্ভব।”
শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা করে আগামী এক মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানান। তাদের ভাষায়, “যদি তা না করা হয়, তবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আমরা নিজেরাই আদায় করে নিতে পিছপা হব না।”
প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পার হলেও আজ অব্দি কখনোই কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। অথচ এই ছাত্র সংসদের নামে কোটি কোটি টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী আসার পর ছাত্র সংসদের অর্থ আলাদাভাবে জমা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলন এবং কয়েক দফার অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির পর গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত এক গেজেটের মাধ্যমে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯’-এ ব্রাকসু নির্বাচনের বিষয়টি সংযুক্ত করার নির্দেশনা আসে।
তবে ব্রাকসুর গঠনতন্ত্রে হল সংসদে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার নিয়ম রাখা, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসন না রাখাসহ বেশ কিছু ইস্যুকে সামনে এনে গঠনতন্ত্রটি সংশোধনের দাবি জানান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বেরোবি শাখার কতিপয় নেতাকর্মী এবং বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ নিয়ে সোমবার তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্রাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধনের পর নির্বাচন আয়োজনেরও দাবি করেন।
এ দিকে, ব্রাকসুর হল সংসদে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক জানান, এই গঠনতন্ত্রটি প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বিশেষজ্ঞরা কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মহোদয়ও ছিলেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্র সংসদের হল শাখায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই আঙ্গিক থেকেই, তাঁরা এই বিষয়টি ব্রাকসু গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সকল শিক্ষার্থী দাবি করলে, তা আবার সংশোধন করে সমগ্র নির্বাচন আয়োজনে আরও সময় প্রয়োজন হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে, অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা করে আগামী এক মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, কতিপয় মহল নির্বাচন পেছানোর হীন উদ্দেশ্য নিয়েই বর্তমানে আবার গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি তুলছেন।

No comments