শিরোনাম

কৌশল করে আসামী ধরে বগুড়া ডিবি'র ইনচার্জসহ তিন কর্মকর্তা প্রত্যাহার


বগুড়া প্রতিনিধিঃ

বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের(ডিবি) ইনচার্জসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স ( আরআর এফ) রাজশাহীতে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনিক কারনে তাদেরকে সংযুক্তি করা হয় বলে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহান স্বাক্ষরিত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৪ অক্টোবর স্বাক্ষরিত আদেশটি বুধবার বগুড়া জেলা পুলিশে পৌঁছে। 

যাদেরকে সংযুক্তির আদেশ দেয়া হয়েছে তারা হলেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ( ডিবি) ইনচার্জ ইকবাল বাহার, পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেন, ও উপপরিদর্শক ( এসআই) মোহাম্মদ ফজলুল হক।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ ইকবাল বাহার প্রত্যাহারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

এদিকে ডিবি'র ইনচার্জ ইকবাল বাহারের প্রত্যাহার আদেশ বাতিলের দাবীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব সাকিব খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন ডিবি'র ওসির বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে

আগামীকাল বৃহস্পতিবার এসপি অফিস ঘেরাও করা হবে। অপরদিকে  এনসিপি'র বগুড়া জেলা শাখার সদস্য শওকত ইমরান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ডিবি'র ওসির

প্রত্যাহার আদেশ বাতিলের দাবী জানিয়েছেন। বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা  এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

ডিবি'র তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের নেপথ্যেঃ ডিবি পুলিশের একটি সুত্র জানান,গত শনিবার রাতে বগুড়ার ডিবি পুলিশ ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা থেকে রাজু মুন্সি(২৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে বগুড়ায় নিয়ে আসে।পরদিন তাকে একটি প্রতারনা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধম্যে কারাগারে পাঠানো হয়। রাজু মুন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ,  তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে গত ২৭ জুলাই বগুড়া শহরের আব্দুল হক নামের এক ব্যবসায়ীকে ফোন করেন। ওই ব্যবসায়ীর মাদ্রাসা পড়ুয়া সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়ার জন্য ব্যাংক হিসাব নম্বর চাওয়া হয়।তিনি ( আব্দুল হক) ব্যংক হিসাব নম্বর দিলে তার মোবাইল ফোনে একটি পিন নাম্বার পাঠিয়ে তা সংগ্রহ করে নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব থেকে ২৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৯৯৫ টাকা স্থানান্তর করে নেন প্রতারক চক্র। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এবিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে ডিবি'র পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেন অভিযোগ তদন্ত শুরু করেন। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় দীর্ঘ তদন্ত করে ডিবি পুলিশ রাজু মুন্সিকে সানাক্ত করেন। এরপর বগুড়ার ডিবি পুলিশ রাজু মুন্সিকে গ্রেপ্তার করার জন্য

র‌্যাবের সহযোগিতা চান। রাজু মুন্সিকে গ্রেপ্তার করতে র‌্যাবের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুরোধ পত্রে রাজু মুন্সিকে বগুড়ার একটি ডাকাতি মামলার আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বগুড়া ডিবি'র অনুরোধে

র‌্যাব ফরিদপুর রাজু মুন্সিকে গ্রেপ্তার করলে শনিবার রাতে বগুড়া ডিবি পুলিশের একটি টীম তাকে বগুড়ায় নিয়ে

আসে।এরপর আব্দুল হক বাদী হয়ে ১১ অক্টোবর রাজু মুন্সির নামে প্রতারনার মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন ডিবির এসআই ফজলুল হক।

ডিবি পুলিশ রাজু মুন্সিকে  গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত সিমকার্ড ও নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করে।এছাড়াও প্রতারনা করে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা রাখা ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদালতের মাধ্যমে জব্দ করা হয়। 

বগুড়া ডিবি'র ওসি ইকবাল বাহার জানান,ডাকাতির মামলার অনুরোধ পত্র পাঠিয়ে গ্রেপ্তার করা যুবককে প্রতারনা মামলায় চালান দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ভুলবোঝাবুঝির কারনে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি তিনজনকে ডিবি থেকে প্রত্যাহার করে আরআরএফ-এ সংযুক্তির আদেশ দিয়েছেন।  তিনি আরো বলেন,  ডিবির পুলিশ পরিদর্শক রাকিব হোসেন তদন্ত করে  রাজু মুন্সিকে  সনাক্ত করে। প্রতারণার ঘটনায় মামলা দেরীতে  হওয়ার কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে উক্ত প্রতারককে গ্রেফতারের জন্য বগুড়া সদর থানার মামলা নং ৮৭ তাং ৩০/০৪/২০২৫ খ্রি. ধারা-৩৯৫/৩৯৭  মূলে র‌্যাব-১২ বগুড়াকে একটি অনুরোধপত্র পাঠানো  হয়। উক্ত আসামীকে র‌্যাব ফরিদপুর গ্রেফতার করে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা হেফাজতে রাখে। পরবর্তীতে  পুলিশ পরিদর্শক  রাকিব হোসেন র‌্যাবের কর্মকর্তার  সাথে আলোচনা করে উক্ত আসামীকে বগুড়া ডিবিতে নিয়ে আসার পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে রাজু মুন্সি প্রতারণা করার বিষয়টি স্বীকার করেন। পরবর্তীতে বাদীর লিখিত এজাহারের প্রেক্ষিতে উক্ত ঘটনায় বগুড়া সদর থানার মামলা নং ৪৩ তাং ১১/১০/২৫ ইং ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড রুজু হয়। 

তিনি আরো বলেন প্রতারনানকরে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সাথে জড়িত যুবককে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য ডিবি পুলিশ কৌশল করেছে। এতবড় প্রতারককে ধরার জন্য ডিবি পুলিশের টীম পুরুস্কার পাওয়ার কথা।কিন্তু সামন্য ভুলবোঝাবুঝির জন্য তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাজাহানের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।এবিষয়ে তার মন্তব্য জানার জন্য মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা দেয়া হলেও তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

No comments