ফেসবুক লাইভে এসে বিএনপি (শ্রমিকদল) নেতার আত্মহত্যার চেষ্টা
পাটগ্রাম প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ফেসবুক লাইভে এসে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠন শ্রমিকদলের এক নেতা। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ৮টার দিকে পাটগ্রাম উপজেলা শ্রমিকদলের আহ্বায়ক ওমর ফারুক (৪২) তার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লাইভে এসে কীটনাশক (ডাসবান) পান করেন। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।
লাইভে আসার আগে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ওমর ফারুক। সেখানে তিনি লেখেন—
"আমি বিএনপি করে নিজের জীবন শেষ করে ফেললাম... আমি আর বাঁচতে চাই না! বিদায়..."
তিনি স্ট্যাটাসে আরও উল্লেখ করেন, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছেন, যা তাকে মানসিকভাবে চরমভাবে ভেঙে দিয়েছে।
তার দাবি, পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে কিছু ‘সুবিধাবাদী’ ও ‘চাঁদাবাজ’ ব্যক্তি ঢুকে পড়েছে, যারা দলের ক্ষতি ছাড়া কিছুই করছে না। তিনি দলের জন্য বারবার ত্যাগ স্বীকার করেছেন, মার খেয়েছেন, সংসার চালাতে হিমশিম খেয়েছেন বলেও জানান।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন, আগামীকাল তার মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা রয়েছে, এবং এই পরিস্থিতির প্রভাবে মেয়েটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। একইসাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি অনুরোধ জানান যেন ‘সুবিধাবাদীদের’ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ শপিকার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির একজন নেতা জানান, সদ্য যোগদান করা ইউএনওর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়ে ওমর ফারুককে না নেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে গালিগালাজ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে দলের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়। এতে ক্ষোভ থেকেই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান বলেন,
"দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। হয়তো এই কারণেই আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা তার ও তার পরিবারের খোঁজখবর রাখছি। আপাতত তিনি শঙ্কামুক্ত আছেন।"
এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান,
"বিষয়টি শুনেছি। এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

No comments