লটারী পদ্ধতিতে ওসিদের বদলি: পুলিশ বিভাগেই বাড়ছে ক্ষোভ ও বিতর্ক
স্টাফ রিপোর্টারঃ
পুলিশ বিভাগে সাম্প্রতিক সময়ে লটারী বা “উঠাও বাচ্চা” পদ্ধতিতে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বদলি নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন—দায়িত্বে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, কর্মমূল্যায়ন ও পেশাগত যোগ্যতার পরিবর্তে ভাগ্যনির্ভর এই পদ্ধতি তাদের পেশাগত মর্যাদা ও মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিভাগের ভেতরেই আলোচনায় উঠে এসেছে—যোগ্যতার বদলে ‘ভাগ্য গণনা’ এখন নতুন মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ এটি ব্যঙ্গ করে বলছেন, “এরপর হয়তো মামলার তদন্ত, আসামি ধরার দায়িত্বও লটারীর ওপর নির্ভর করবে!”
স্বচ্ছতার দাবি, তবে মাঠে অভিযোগের গুঞ্জন, লটারী পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ঘুষ–দুর্নীতি, অদৃশ্য লবিং ও স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাব নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কর্মকর্তাদের একটি অংশের দাবি—স্বচ্ছতার কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছু গোষ্ঠী এ পদ্ধতিকে নিজস্ব প্রভাব খাটানোর সুযোগে পরিণত করেছে।
মাঠপর্যায়ের অনেক ওসি ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভাষ্য—যারা সততার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেন, তারাই সবচেয়ে বেশি হতাশ হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন বা জুলাই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনকারীরা লটারীতে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন।
বদলীকৃত কর্মকর্তাকে লটারীতে নতুন প্রস্তাব—উঠছে প্রশ্ন? অভিযোগের একটি বড় অংশ ঘুরছে নীলফামারী জেলা পুলিশের ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ হোসেনকে ঘিরে।
সূত্র জানায়, তাকে ২৬ নভেম্বর রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয় এবং ২৯ নভেম্বরের মধ্যে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যেই লটারী তালিকায় তার নাম আবার রংপুর রেঞ্জের কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি পদে প্রস্তাবিত হিসেবে উঠে আসে—যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
অভিযোগকারী পক্ষের দাবি—ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ হোসেন ২০১৮ সালে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ থানায় দায়িত্ব পালনের সময় “দিনের ভোট রাতে” দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে আলোচনায় ছিলেন। পরে ২০২৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থানার ওসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
তাদের প্রশ্ন—এসব আলোচনা-সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে আবার লটারীতে প্রস্তাবিত হলেন?
যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
‘ভাগ্য উন্নয়ন ফি’-র নতুন গুঞ্জন! পুলিশ বিভাগে অনেকে বলছেন—লটারী শুরুর পর নাকি “ভাগ্য উন্নয়ন ফি” নামে অঘোষিত এক নতুন সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। কাগজে-কলমে পদ্ধতি স্বচ্ছ হলেও বাস্তবে নাকি অদৃশ্য হাত ও পর্দার আড়ালের হিসাবই বেশি কার্যকর।
একজন মধ্য–পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন—“যেখানে আলোই নেই, সেখানে সবকিছু খুব স্বচ্ছ দেখায়। লটারীও ঠিক তেমন।”
ভাগ্য নয়, যোগ্যতার দাবি: মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহু কর্মকর্তা বলছেন—পুলিশের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীতে বদলি প্রক্রিয়া কাজের মূল্যায়ন, নেতৃত্বগুণ, অপরাধ দমন, জনসম্পৃক্ততা ও তদন্ত দক্ষতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। ভাগ্যনির্ভর পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে মনোবল, পেশাদারিত্ব ও প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

No comments