বগুড়ায় ছয় বছরের শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগ: এজাহারে উঠে এলো হৃদয়বিদারক বর্ণনা
বগুড়া জেলায় ছয় বছরের এক শিশুকে নৃশংস নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শিশুটির মা, স্থানীয় একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত একজন নারী চিকিৎসক, থানায় এজাহার দায়ের করে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। এজাহারে তিনি যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা হৃদয়বিদারক ও সুস্থ বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো।
চিকিৎসক মা জানান, ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় গেলে ছয় বছরের যমজ সন্তানকে বাবার তত্ত্বাবধানে রেখে যান। বাড়িতে চারজন কাজের সহকারী থাকা সত্ত্বেও শিশুটির বাবা তাকে ও তার যমজ বোনকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে যান। বাসায় ফিরে শিশুটির ব্যবহৃত পোশাকে রক্তের দাগ দেখতে পান কাজের সহকারী। বিষয়টি জানানো হলে মা তৎক্ষণাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, শিশুটি প্রস্রাব করতে না পেরে যন্ত্রণায় কাঁদছিল ও অসংলগ্ন কথা বলছিল। পরিবারের অন্য সদস্যরা জানান, দুপুরের আগে তাকে ওয়াশরুমে নিলে কোনো রক্ত দেখা যায়নি, এ থেকেই সন্দেহ আরও গভীর হয়।
নিজে একজন সার্জন হওয়ায় মা প্রথমে খালি চোখে মেয়েকে পরীক্ষা করেন এবং দেখতে পান শিশুটির সংবেদনশীল স্থানে গুরুতর আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। এরপর তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের পরীক্ষায়ও একই উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া যায়।
পরদিন ফরেনসিক চিকিৎসকরা শিশুটির হাইমেন ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সংবাদ শোনার পর ভেঙে পড়েন শিশুটির মা। আরও বেদনাদায়ক বিষয় হলো থানায় নারী পুলিশ শিশুটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে নির্যাতনের বিষয়ে স্পষ্ট করে এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের নাম উল্লেখ করে।
মেয়ের শারীরিক অবস্থা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার কারণে প্রথমে মামলা করতে সময় লাগে বলে জানান চিকিৎসক মা। পরে আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করেন।
ঘটনাটি এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি করেছে। পরিবারের ভেতরে এমন বর্বর ঘটনার কথা শুনে স্তম্ভিত স্থানীয়রা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, এজাহার গ্রহণ করা হয়েছে এবং ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে।
একটি পরিবারের ভেতরে শিশুর জন্য থাকা সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ই যখন ভয়াবহ নির্যাতনের স্থানে পরিণত হয়, তখন তা পুরো সমাজকেই নাড়া দেয়। ভিকটিম শিশুর মা-বাবা দুজনই বগুড়ার সুনামধন্য
চিকিৎসক। মামলার বাদী শিশুর মা। মামলা দায়ের করা হয়েছে পশ্চিম বগুড়ার একটি থানায়।
নতুন অগ্রগতি: এ ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত শিশুটির ৮০ বছর বয়সী দাদাকে পুলিশ আজ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ ধারণা করছে ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। তবে তদন্তের স্বার্থে তারা এ মুহূর্তে বিস্তারিত জানাতে রাজি হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি, পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কিছু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, যা এই ঘটনার পেছনে ভূমিকা রেখেছে কি না তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঘটনাটির প্রকৃত কারণ উদঘাটনে ফরেনসিক রিপোর্ট, সাক্ষ্যগ্রহণ, পারিবারিক সম্পর্ক, সম্পত্তিগত বিষয় ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব সবদিকই খতিয়ে দেখা জরুরি।

No comments