শিরোনাম

মানিকগঞ্জে কৃষিজমির মাটি লুট, তদন্তের আদেশ চেম্বারে বহাল, প্রশাসনের নাকের ডগায় থেমে নেই অবৈধ উত্তোলন

মানিকগঞ্জ (প্রতিনিধি):- 

মানিকগঞ্জে শতভাগ উর্বর কৃষিজমি থেকে নির্বিচারে মাটি কেটে লুটের ঘটনায় ভূমি মন্ত্রালয়ের সচিবকে কমিটি গঠন করে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে বহাল রয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে মের্সাস প্রিন্স কনস্ট্রাকশনের মালিক বালু মহালের ইজারাদার মোস্তাফিজুর রহমান প্রিন্সের পক্ষে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার জজ আদালত নো অর্ডার দেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার রাহাতপুরে শতভাগ উর্বর কৃষিজমি থেকে নির্বিচারে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে অবিলম্বে ভূমি মন্ত্রালয়ের সচিবকে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

রিট আবেদনে বলা হয়, রাহাতপুর মৌজায় ৪ হাজার একরের বেশি কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে তিন ফসলি জমির মালিকদের থেকে খাজনা-কর নেওয়া বন্ধ করে সেই জমিতে বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। ইজারাদার প্রতিনিয়ত বালু-মাটি খনন করে কৃষিজমি নষ্ট করছেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের পক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে বারবার অভিযোগ করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ইজারাদারের লোকজন  সাধারণ কৃষকদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী মো. শফিকুল ইসলামসহ ১৭ কৃষকের পক্ষে এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রিট আবেদন করা হয়।

রিট পর আদালত আগামী ৩ মাসের জন্য কৃষি জমির নির্বিচার ড্রেজিং বন্ধ করা নির্দেশনা দেন। এছাড়া, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয় কিন্তু এখন পর্যন্ত রাহাতপুর মৌজার বাহিরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয় নাই।অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যমুনা নদীর  বৈদ্যুতিক কেডিসি খাম্বা যেকোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে  ।

স্থানীয়রা জানান, গুটি কয়েক লোকের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এভাবে সর্বনাশ মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষতি রোধ করতে হবে। তাদের দাবি, অবিলম্বে এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে কি না, সেটা তদন্ত করে বের করতে হবে।

আদেশের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালত নো অর্ডার আদেশ দেন। যার মধ্যে দিয়ে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশ বহাল রইলো। যার ফলে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার রাহাতপুর মৌজার কৃষিজমিকে বালু মহালে পরিণত করা আপাতত বন্ধ রইলো এবং ভূমি মন্ত্রালয়ের সচিবকে স্পেশাল ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করে ওই বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রইলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এখান থেকে বালু উত্তোলন করে তারা বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। আমরা যদি তাদের নাম বলি তাহলে রাতে ঘরেও থাকতে পারবো না। 

বালু উত্তোলনের কারণে বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে বাড়িঘর ও কৃষি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে । যদি আমরা বালু উত্তোলনে বাঁধা প্রদান করি তাহলে আমাদেরকে ধরে নিয়ে মারবে।

বাঘুটিয়ার আতুয়ার মোল্লা জানান, বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই প্রভাবশালী বলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ দিতেও সাহস পাচ্ছেন না।

ফরিদপুর নৌ পুলিশের এসপি সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, এক দুই দিন আগেই ওখানে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে তারপরও যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দৌলতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত আছে। তাছাড়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারিদের  বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। খুব শিগগিরই বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিয়ান নুরেন বলেন, আমরা অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি তারপরও যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আমি মাত্র কয়েকদিন হলো এসেছি এরকম ঘটনার জন্য আমি দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে নির্দেশ প্রদান করেছি একবার এক বার যে হতো ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে বারবার তো ভ্রাম্যমাণ করা যায় না, তাই তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।।

No comments