লক্ষ্মীছড়িতে অস্ত্রের ঝনঝনানি: নিরাপত্তার দাবিতে জন সাধারণের আর্তনাদ
শ্যামল ত্রিপুরাঃ
খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দুর্গম বর্মাছড়ি ইউনিয়ন—এক সময়ের শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি গ্রাম, আজ পরিণত হয়েছে আতঙ্কের জনপদে। পাহাড়ি ঝরনার সুরের সাথে মিশে গেছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, নিঃশব্দ ভয় ও অজানা আতঙ্কের ছায়া।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় সাত হাজার মানুষের বসবাস বর্মাছড়িতে। তাদের অধিকাংশই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সদস্য। কিন্তু সংখ্যার পেছনে লুকিয়ে আছে অসংখ্য নিঃশব্দ যন্ত্রণা। স্থানীয়দের দাবি—ইউপিডিএফ-এর সশস্ত্র তৎপরতায় এলাকার মানুষ প্রতিদিন মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছে।
“আমরা বাজারে যেতে ভয় পাই, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারি না, জুমচাষ করতে গেলেও অস্ত্রের মুখে পড়তে হয়,”—এমন করুণ আর্তি এলাকার সাধারণ মানুষের। তারা জানায়, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুনের ভয়—সব মিলিয়ে শান্তি এখন তাদের জন্য বিলাসিতা।
সাম্প্রতিক সময়ে বর্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইউপিডিএফ এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে স্থানীয়দের উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ সেনা ক্যাম্পের পক্ষে সওয়াল করে বলছেন “আমরা চাই নিরাপদে বাঁচার অধিকার। মায়েরা যেন নির্ভয়ে বাজারে যেতে পারে, শিশুরা যেন স্কুলে যেতে পারে, কৃষকরা ভয় ছাড়া জুমচাষে ফিরতে পারে।”
তাদের মতে, সেনা উপস্থিতি মানেই নিরাপত্তা। “খিরাম আর শুকনাছড়ির ক্যাম্পগুলো স্থানীয়দের ক্ষতি করেনি, বরং সেখানকার মানুষ এখন নিরাপদ,”—বলছেন এক গ্রাম প্রতিনিধি।
স্থানীয়দের দাবি, ইউপিডিএফ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আর্য কল্যাণ বনবিহারের নামে যে আপত্তি তোলা হচ্ছে, সেটি আসলে সেনা ক্যাম্প স্থাপনা ঠেকানোর কৌশল মাত্র। “বর্মাছড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা আছে, এখানে কোনো সত্যিকারের বিহার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না,”—বলেছেন এক স্থানীয় প্রতিনিধি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান নতুন নয়। বাইরের সহায়তা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা আধিপত্য ধরে রাখছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কিন্তু এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। “আমাদের চাষ, আমাদের বাণিজ্য, আমাদের স্বপ্ন—সবই ধ্বংসের মুখে,”—বলেছেন বর্মাছড়ির এক জুমচাষি।
বর্মাছড়িবাসীর একটাই দাবি—“আমরা শান্তি চাই, আমরা জীবন চাই।” তাদের বিশ্বাস, রাষ্ট্র ও সমাজের যৌথ উদ্যোগেই আবার ফিরে আসবে শান্তি। পাহাড়ে অস্ত্র নয়, বাজবে জীবনের সুর—এই আশা নিয়েই তারা দিন গুনছে।

No comments