শিরোনাম

চুয়াডাঙ্গায় মাজরা পোকার আক্রমণে দিশেহারা কৃষক, ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা।

 


এম এ মামুন চুয়াডাঙ্গা

মাঠের পর মাঠ সবুজ ফসহলের সমারোহ। কিন্তু সেই সবুজের বুকেই এখন কালো থাবা। চুয়াডাঙ্গার বিস্তির্ণ ধানক্ষেতে চলছে মাজরা পোকার তান্ডব। সোনার ফসলের স্বপ্ন দেখা কৃষকের চোখে আজ শুধুই হতাশা। এই পোকার আক্রমণে দিশেহারা জেলার কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেও তাতে আস্থা নেই কৃষকের । 

চুয়াডাঙ্গার প্রধান খাদ্য ফসল রোপা আমন। জেলায় ৩৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে এবার রোপা আমনের আবাদ হয়েছে। কিন্তু চারা রোপণের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় মাজরা পোকার আক্রমণ। হলুদ মাজরা পোকা বা কালোমাথা মাজরা পোকার কীড়াগুলো ধানের কারের ভেতরে প্রবেশ করে ডিগ পাতার গোড়া কেটে ফেলে। এতে গাছ মারা যায়। কৃষি বিজ্ঞানীদের ভাষায় যাকে বলা হয় 'ডেড হার্ট' বা মরা ডিগ। আর শীষ আসার পর ক্ষতি হলে পুরো শীষ সাদা হয়ে চিটা হয়ে যায়, যা পরিচিত 'সাদা শীষ' নামে।

কৃষকরা বলছেন, বাজারে নামিদামি কোম্পানির দামি কীটনাশক ব্যবহার করেও সুফল মিলছে না। সম্ভবত পোকাগুলো এখন কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। একরের পর একর জমিতে ব্যাপকহারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় শঙ্কিত হাজার হাজার কৃষক পরিবার।

এদিকে কীটনাশক ছাড়াও পোকা দমনে কিছু সমন্বিত পদ্ধতির ওপর জোর দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এনিয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মাসুদুর রহমানের পরামর্শ, মাজারা পোকা দমনে সকালের পরিবর্তে বিকালে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। জমিতে আলোর ফাঁদ পেতে মাজরা পোকার মথ ধরে মেরে ফেলতে হবে। জমিতে ডালপালা বা খুঁটি পুঁতে দেওয়া, যাতে পাখি বসে পোকা খেতে পারে। এছাড়া ধানের পাতা থেকে নিয়মিত ডিমের গাদা খুঁজে বের করে তা নষ্ট করে ফেলাও জরুরি বলছেন কৃষি বিভাগ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আক্রমণ ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকতেই ব্যবস্থা নেওয়া।

প্রকৃতির এই প্রতিকূলতা আর পোকার আক্রমণ চুয়াডাঙ্গার কৃষকদের জীবন-জীবিকাকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কৃষি বিভাগ তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেও, ফলন বিপর্যয় ঠেকানো নিয়ে সন্দিহান কৃষকেরা। এই মুহূর্তে প্রয়োজন সরকারি সহযোগিতা এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা। নয়তো, লোকসানের বোঝা নিয়ে আগামী দিনে আরও বেশি সংকটে পড়বেন এই অঞ্চলের অন্নদাতারা।



No comments