ভূঞাপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু! বেচে গেলো সন্তান! লাশ নিয়ে বানিজ্য
টাঙ্গাইল (ভূঞাপুর)প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন এক প্রসূতি মা। নিহতের নাম মাসুমা আক্তার (২১)। তিনি ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া গ্রামের জামাল ভূঁইয়ার স্ত্রী। তবে মৃত্যুর মধ্য দিয়েও বেঁচে গেছে তার নবজাতক সন্তান।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৯অক্টোবর) ভূঞাপুর পৌর এলাকার সিটি হার্ট ক্লিনিকে। অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অনিয়ম এবং পরবর্তীতে ঘটনাটি গোপন করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে প্রসব ব্যথা ওঠায় মাসুমাকে ভূঞাপুরের সিটি হার্ট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। দুপুর দুইটার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে।
অপারেশন করেন ধনবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. এনামুল হক সোহেল— যিনি একইসঙ্গে ওই ক্লিনিকের পার্টনার হিসেবেও পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এনেস্থেসিয়ার দায়িত্বও নিজেই পালন করেন, যদিও এ কাজে আলাদা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
অপারেশনের পরপরই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। কিন্তু কোথাও স্থানান্তরের ব্যবস্থা না করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লিনিকেই ফেলে রাখা হয় তাকে। একপর্যায়ে নিথর দেহে পরিণত হন মাসুমা আক্তার। স্বজনদের অভিযোগ, মৃত্যুর পরও প্রায় ছয় ঘণ্টা তাকে অপারেশন থিয়েটারে আটকে রাখা হয়, কাউকে দেখতেও দেওয়া হয়নি। পরে ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য’ অন্যত্র পাঠানোর নামে মরদেহই অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্লিনিক প্রাঙ্গণে শুরু হয় কান্না, ক্ষোভ আর বিক্ষোভ। স্থানীয়দের চাপের মুখে পুলিশ এসে ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেয় এবং দুইজন স্টাফকে আটক করে। তবে চিকিৎসক ও ক্লিনিকের মালিকপক্ষ পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাতে ভূঞাপুর থানায় ‘মীমাংসার নাটক’ মঞ্চস্থ হয়। সেখানে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৫ লাখ টাকা প্রদান করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়া তথ্যে জানা যায়, ওই টাকার একাংশ কিছু তথাকথিত সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও পুলিশের হাত ঘুরেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. এনামুল হক সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টা মীমাংসা হয়ে গেছে, এখন আর কিছু বলার নেই।”
ঘটনার পর থেকে সিটি হার্ট ক্লিনিকের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ভূঞাপুর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, “থানায় মীমাংসা বা টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুব হাসান বলেন, ঘটনার পর থেকে ক্লিনিক বন্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ভূঞাপুরে অবাধে গড়ে ওঠা এসব অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও চিকিৎসা অব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

No comments