শিরোনাম

বিএডিসি সেচ কিশোরগঞ্জে অনিয়মের ছড়াছড়ি : কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি, গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে




 কিশোরগঞ্জ, প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচ কিশোরগঞ্জ অফিসটি এখন অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিসে না এসে ঘরে বসেই বেতন তুলছেন, গ্রাহকরা দপ্তরের দরজায় ঘুরেও সেবা পাচ্ছেন না।

গত ২৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে সরেজমিনে বিএডিসি সেচ কিশোরগঞ্জ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, পুরো দপ্তরে একমাত্র নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কেউ নেই। উপস্থিত ছিলেন না তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী কিংবা ক্যাশিয়ার—কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ অফিসে তিনটি কার্যালয় রয়েছে—তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী এবং উপসহকারী প্রকৌশলীর দপ্তর। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি, দায়িত্বে গাফিলতি ও অসদাচরণে কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

অফিস পরিদর্শনে দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পংকজ কর্মকার নিয়মিত অফিসে না এসে অন্যত্র অবস্থান করেন। সহকারী ক্যাশিয়ার মো. মোফাজ্জল হোসেন এবং অফিস সহায়ক সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মচারীরও উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে পরে দুই-একজন কর্মচারী এলেও হাজিরা খাতায় তাদের দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।

সহকারী প্রকৌশলী শাহ কিবরিয়া মাহবুব তন্ময় বদলি হলেও তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে শাওন মালাকার দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে সদর উপজেলার দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী বাহাদুর আলীর কার্যালয়ও বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।

দপ্তরের সামনে সেচযন্ত্রের আবেদন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মো. জিয়াউর রহমান নামের এক গ্রাহক বলেন,

মাসের পর মাস ঘুরছি, কোনো কর্মকর্তা পাওয়া যায় না। হয়রানি ছাড়া লাইসেন্স মেলে না।

স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পংকজ কর্মকার মাসে দুই-তিন দিনের বেশি অফিসে আসেন না। তিনি কিশোরগঞ্জ থেকেই নেত্রকোনা অফিসও তদারকি করেন। তার আস্থাভাজন আউটসোর্সিং কর্মচারী সাইফুল ইসলামকে দিয়ে সব কাজ করান। এমনকি যেখানে বদলি হন, তাকেও সঙ্গে নিয়ে যান।

আরও জানা গেছে, ওই সাইফুল ইসলাম নিয়মবহির্ভূতভাবে বিনা ভাড়ায় অফিস কোয়ার্টার ব্যবহার করছেন। তিনি দাপ্তরিক কাজের চেয়ে ঢাকায় অবস্থান করে ১৭০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্পের পিডি হওয়ার জন্য কর্তাব্যক্তিদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করছেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা ফোনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পংকজ কর্মকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,

আপনাদের সঙ্গে চা খেতে বসে বিষয়টা আলোচনা করব।

জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, বিএডিসি সেচ কিশোরগঞ্জ দপ্তরে দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা, শৃঙ্খলাভঙ্গ ও গ্রাহক হয়রানির বিষয়গুলো অবিলম্বে তদন্তের আওতায় আনা জরুরি।

No comments