শিরোনাম

ধুনটে আশ্রয়ন প্রকল্প নিয়ে অভিযোগের পাহাড়: দলিলহীন ঘর, চাঁদাবাজির অভিযোগ সাবেক ইউএনও’র বিরুদ্ধে

 

বগুড়া প্রতিনিধিঃ

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্প নিয়ে উঠেছে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। বরাদ্দ পাওয়া অনেক সুবিধাভোগী এখনো ঘরের কোন কাগজপত্র পাননি। পাশাপাশি সাবেক ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্তের বিরুদ্ধে উঠেছে চাঁদাবাজি ও সরকারি সম্পদ অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ।

চুনিয়াপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী মিনি খাতুন বলেন, “আমাকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোনও দলিল বা কাগজ দেওয়া হয়নি।” একই ধরনের অভিযোগ করেন চায়না খাতুনও, যিনি জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে ঘর পেলেও এখনো কোনও অফিসিয়াল কাগজপত্র হাতে পাননি। এই একই অবস্থায় রয়েছেন আরও অনেক নারী—রেহানা, জুলেখা, শিউলি এবং নাসিমা, যাদের অভিযোগ বরাদ্দ পেলেও তারা মালিকানা সংক্রান্ত কোনও প্রমাণপত্র পাননি।

এদিকে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়ে সাবেক ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্তের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় ইটভাটা ও বালু ব্যবসায়ীরা। মথুরাপুর এলাকার একাধিক ইটভাটা মালিক দাবি করেছেন, ইউএনও তাদের কাছ থেকে ইট চেয়েছিলেন এবং কেউ দিতে অস্বীকার করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আর্থিক জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে।

এস.এস.এস ইটভাটার মালিক শাহ আলী জানান, “ইউএনও ৬০ হাজার ইট চেয়েছিলেন। দিতে না পারায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।” অন্যদিকে, জননী ইটভাটার মালিক আব্দুল আলিম জানান, তার কাছ থেকে ইট নেওয়ার পরও ৫০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। জোড়খালি এলাকার শামসুল বারী বলেন, “৩ লাখ টাকার ইট নিয়ে ইউএনও স্যার অন্যত্র বদলি হয়ে যান, কোনো টাকা দেননি।”

বালু ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরাও রয়েছেন একই অবস্থায়। রামনগরের নজরুল ইসলাম জানান, “১০০ ট্রাক বালু নিলেও আমি কোনো টাকা পাইনি।” জিঞ্জিরতলা গ্রামের ট্রাক মালিক সাবেদ আলী সরকার বলেন, “বালু পরিবহনের জন্য ভাড়া বাবদ ২৮ হাজার টাকা এখনও বকেয়া।”

আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে একটি কমিটি থাকার কথা থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন, তাদের কিছুই জানানো হয়নি। সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল আলীম বলেন, “সকল সিদ্ধান্ত ইউএনও একাই নিয়েছেন। আমাদের শুধু চাপে ফেলে চেক ও কাগজে সই করানো হতো।” সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল সাজ রিজন বলেন, “আমি কমিটির সদস্য ছিলাম কি না তাও নিশ্চিত না।”

ধুনট সদর ইউনিয়নসহ আশেপাশের ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরাও জানান, ঘর নির্মাণ বা বরাদ্দ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তাদের অংশগ্রহণ ছিল না।

সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প যেখানে ভূমিহীনদের জন্য নিরাপদ ঠাঁই হবার কথা, সেখানে এমন অনিয়ম-অভিযোগ প্রকল্পটির স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।

No comments