শিরোনাম

ফরিদপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো ছোট্ট রাইসা মনি — কান্নায় ভাসছে পুরো গ্রাম

 

অনলাইন ড্রেসঃ

একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গের নাম হয়ে উঠলো রাইসা মনি (১১)। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্ত ঘটনায় নিহত রাইসাকে শেষবারের মতো চোখের জলে বিদায় জানালো তার পরিবার ও গ্রামবাসী। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া ঈদগাহ মাঠে শুক্রবার সকাল ৯টায় জানাজা শেষে ছোট্ট রাইসাকে দাফন করা হয় বাজড়া কবরস্থানে।

ঘটনার পর থেকেই কান্না থামছে না মা-বাবা শাহাবুল শেখ ও মিম সুলতানার। মেয়ের লাশ বুকে জড়িয়ে বারবার ভেঙে পড়ছিলেন তারা। রাইসার জন্মের আগে তাদের ঘরে এসেছিল বড় মেয়ে সিনথিয়া (১৩), আর সবার ছোট রাফসান (৪)। মেয়েদের ভালো স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন এই দম্পতি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই ভর্তি করিয়েছিলেন মাইলস্টোন স্কুলে।

রাইসা ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার বড় বোন সিনথিয়া অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে একই স্কুলে। ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়েছে সিনথিয়া—সেই দিন ছোট বোন রাইসার জন্য আইসক্রিম আনতে গিয়ে স্কুলের বাইরে ছিল সে।

রাইসার বাবা শাহাবুল শেখ বলেন,

“স্কুলে পৌঁছে দিয়েছিলাম দুই মেয়েকে। ওরা বলেছিল—আব্বু, আজ আমাদের নিতে আসো। কিন্তু আর নিতে পারিনি আমার ছোট্ট মেয়েকে। ২২ জুলাই সিআইডি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাইসার মরদেহ শনাক্ত করে। রাতে লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরি।”

মা মিম সুলতানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান,

“সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রুই মাছ আর মুরগির মাংস রান্না করে মেয়েদের খাইয়ে দিয়েছিলাম। রাইসার প্রিয় ছিল রুই মাছ। কে জানত, এটাই হবে তার জীবনের শেষ খাওয়া!”

শোকাচ্ছন্ন পুরো পরিবার। বড় বোন সিনথিয়া কোনো কথা বলছে না, পাথর হয়ে গেছে যেন। ছোট ভাই রাফসান ঘুরে ঘুরে খুঁজছে বোনকে—কিন্তু কোনো উত্তর নেই কারো কাছে।

নানি মনোয়ারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,

“রাইসা বলত—নানু আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো। গরিব মেয়েদের সেবা করবো, কোনো টাকা নেব না। শুধু দোয়া কইরো।”

বাজড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন,

“রাইসার মৃত্যুতে গোটা এলাকা নিথর। তার লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর কান্নার রোল পড়ে যায়—কোনো মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।”

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন,

“এই শোক ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আল্লাহ যেন এই পরিবারকে ধৈর্য্য দেন। উপজেলা প্রশাসন রাইসা মনির পরিবারের পাশে থাকবে।”


আরো এক স্বপ্ন থেমে গেল মেহেরপুরে — কবরস্থানে চিরঘুমে মাহিয়া

একই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মাহিয়ারও। বৃহস্পতিবার বিকেলে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। শুক্রবার সকালে মেহেরপুরের কুড়ুলগাছি গ্রামের জয়পুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মাহিয়া ছিল মৃত প্রকৌশলী মো. আলীর মেয়ে। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মা’র সঙ্গে নানাবাড়িতে থাকত। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে চলে যায় সে।

উত্তরার দিয়াবাড়িতে গত সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুলের হায়দার আলী ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই অনেকের মৃত্যু হয়, আহত হন অন্তত ১৭০ জন, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।

রাইসা-মাহিয়াদের মৃত্যু যেন গোটা জাতিকে কাঁদিয়ে গেলো। প্রতিটি কান্না শুধু একটা প্রশ্নই তোলে—কীভাবে, কেন এমন হলো?

এই শিশুরা শুধু সংখ্যায় নয়, তারা ছিল হাজারো পরিবারের স্বপ্ন, ভালোবাসা আর আগামীর প্রতীক। সেই স্বপ্নভঙ্গের দায় কি কেউ নেবে?

No comments