প্রায়ই একটি রিপোর্টই করতে পারি না, ক্ষুধায় মাথা ঘোরে’ — গাজায় বিবিসির সাংবাদিকের হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা
অনলাইন ড্রেক্সঃ
গাজার মতো ভয়াবহ যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করছেন বিবিসির তিনজন ফ্রিল্যান্স ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। পরিবারকে খাবার জোগাতে হিমশিম খাওয়া এসব সাংবাদিক জানিয়েছেন, প্রায়ই না খেয়ে দিন কাটাতে হয় তাদের। এমনকি ক্ষুধার কারণে রিপোর্ট করার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন তারা।
বিবিসির নিজস্ব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই তিন সাংবাদিক কখনো দু’দিন বা তার চেয়েও বেশি সময় না খেয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। তারা এমন সময়েও রিপোর্টিং চালিয়ে গেছেন, যখন তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, প্রিয়জন নিহত হয়েছেন বা ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ থেকে পরিবার নিয়ে পালাতে হয়েছে।
তাদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি বোমা হামলায় আগে গুরুতর আহতও হয়েছেন। তিনি বলেন,
“জন্ম থেকে এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের সময়। এটা নিছকই দুর্ভিক্ষ নয়, এটা এক ভয়াবহ মানবিক সংকট।”
বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা গাজায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দুর্ভিক্ষ’ ঘোষণা না করলেও, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এটিকে মানুষের সৃষ্টি এক নিষ্ঠুর দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস হিসেবে বর্ণনা করেছে। এসব সংস্থা ইসরায়েলকে খাদ্য সরবরাহ বন্ধের জন্য দায়ী করলেও, ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে।
নিরাপত্তার কারণে সাংবাদিকদের নাম প্রকাশ করেনি বিবিসি। তবে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে এক ক্যামেরাম্যান বলেন,
“আমার চার সন্তান। তাদের মধ্যে একজন অটিস্টিক। সে বুঝতে পারে না কী হচ্ছে চারপাশে। কথা বলতে না পারলেও ক্ষুধার যন্ত্রণা বোঝাতে নিজের পেট দেখিয়ে বুঝায়—সে খেতে চায়। আমি কিছুই দিতে পারি না। এটা মনের ভেতর এক অসহ্য যন্ত্রণা তৈরি করে।”
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে কাজ করা সবচেয়ে কনিষ্ঠ এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জানান, তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
“আমার ১৩ বছর বয়সী ছোট বোন বারবার পানি ও খাবার চাইছে। কিন্তু আমরা কিছুই দিতে পারছি না। প্রতিনিয়ত ভাবতে হচ্ছে—কীভাবে খাবার জোগাড় করবো।”
বিবিসি, এএফপি, এপি এবং রয়টার্স এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় কর্মরত স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়,
“মাসের পর মাস এই সাহসী ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকরাই গাজার মাটিতে বিশ্বের চোখ ও কান হয়ে আছেন। আজ তারাই নিজেরাই ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছেন। এই বাস্তবতা তাদের সাংবাদিকতার কাজ আরও কঠিন করে তুলেছে।”

No comments