ফেসবুক লাইভে শেষ আর্তনাদ , আমি আর পারছি না। নিঃশব্দে ভেঙে পড়লো একটি স্বপ্নময় জীবন।
বগুড়া প্রতিনিধিঃ
রাসেল আহম্মেদ আর নেই। ফেসবুক লাইভে এসে বিষ খেয়ে প্রাণত্যাগ করেছেন এই তরুণ, যিনি জীবিকার জন্য কাজ করতেন অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। জীবনের নানা টানাপোড়েন আর পারিবারিক অশান্তি হয়তো তাঁকে এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে, যার পরিণতিতে থেমে গেল এক সম্ভাবনাময় তরুণের জীবন।
মঙ্গলবার সকালে ধুনট পৌরসভার দক্ষিণ অফিসারপাড়ার এক ভাড়া বাসায় ঘটে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা। রাসেল তাঁর নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইলে লাইভে এসে দু’টি ‘এ্যালোমিনিয়াম ফসফাইট’ ট্যাবলেট খান। কিছুক্ষণের মধ্যেই অচেতন হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা লাইভ দেখে চমকে ওঠেন। পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে ছুটে যান। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করানো হয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকেরা দুপুর ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানান।
রাসেলের বাবা সোনা মিয়ার কণ্ঠে শুধু কান্না— "একটা কথা যদি বলতো আগে, কিছু একটা করতাম... আমি জানতেই পারলাম না, সে এমন সিদ্ধান্ত নেবে!"
রাসেল প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন নাদিয়া আক্তার প্রেমাকে। ভালোবাসা দিয়েই ঘর বেঁধেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই ভালোবাসায় ধরেছিল ফাটল। নানা কারণে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছিল। এক সময় তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়।
ধুনট থানার উপপরিদর্শক অমিত হাসান বলেন, "রাসেল পারিবারিক কলহে ভুগছিলেন। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার পেছনে সেই কারণই পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।"
একজন স্বপ্নবাজ তরুণ, যিনি জীবনকে বদলাতে চেয়েছিলেন প্রযুক্তির জগতে— হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন? প্রশ্ন ঘুরছে পরিচিতদের মনে। রাসেলের বন্ধুরা বলছেন, তিনি ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ ছিলেন। পরিবারে শান্তি না থাকলে কষ্টটা তাঁর ভেতরেই জমতো।
আজ রাসেলের ঘরে নেই কোনো শব্দ, নেই হাসি, শুধু কান্নার আওয়াজ আর তার প্রিয় ডেস্কটপ কম্পিউটার— যেটার সামনে বসে হয়তো অনেক রাত জেগে কাজ করতেন, স্বপ্ন দেখতেন ভালো থাকার।
মানুষ কখনো কখনো এমন এক যন্ত্রণার ভার বয়ে বেড়ায়, যা বাইরে থেকে দেখা যায় না। তাই আসুন, পাশে থাকি— কথা বলি, শুনি। কেউ যেন চুপিচুপি চোখের পানি লুকিয়ে শেষ বিদায় না নেয়। রাসেলের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

No comments