শিরোনাম

হেমন্তের লালে রাঙা হাইল হাওড়, শাপলার হাসিতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

চ্যালেন টেন ডেস্কঃ
 প্রকৃতি যখন নিজের রূপে সাজে, তখন সেই সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এমনই এক মোহনীয় সৌন্দর্য 'লাল শাপলার হাসি'। শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের জলরাশি এখন লাল শাপলায় ভরে গেছে। দেখলে মনে হয় যেন, জলের ওপর লাল রঙের এক রূপমহল দাঁড়িয়ে আছে। হেমন্তের এই মায়াময় প্রকৃতি উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই।

মৌলভীবাজারের চারদিকে রয়েছে পাহাড়-টিলা, নদী আর হাওড়। একেক ঋতুতে একেক রকম সৌন্দর্যে ভরে ওঠে হাওড়ের রূপ। আর এবারের হেমন্তে হাইল হাওড় ভরে ওঠেছে লাল শাপলায়। জলের ওপর ভেসে থাকা শাপলার হাসি মুগ্ধ করছে সবাইকে।

ভোরের রোদে শাপলার লাল রঙ আরও উজ্জ্বল হয়। বিল জুড়ে তৈরি হয় এক অন্য রকম আবহ। শুধু শাপলাই নয়, জলজ গাছপালা, লতাপাতা, সিংরাই ফল; সব মিলিয়ে হাওড় হয়ে ওঠেছে আরো সুন্দর।

চৌদ্দটি বিল মিলে তৈরি হয়েছে এই বৃহত্তর হাইল হাওড়। এর মধ্যে মির্জাপুর ইউনিয়নের চেংছড়ি এবং সানন্দা বিল এখন লাল শাপলার জন্য বিখ্যাত। মানুষ এখন এটাকে ‘লাল শাপলার বিল’ নামেই চেনে। সামাজিক মাধ্যমে এ বিলের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় এর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।

প্রতিদিন সকালে আর বিকেলে অসংখ্য দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। বিলপাড়ে সরেজমিনে গেলে কথা হয় চেংছড়ি বিলের আরিফ নামে এক স্থানীয়ের সাথে, যিনি ছড়ার ছন্দে আনন্দে সুর তুলে বললেন, 'আইতে বিল, যাইতে বিল- তাই সবাই আদর করে ডাকছে শাপলা বিল।'

বিভিন্ন স্থান থেকে এত মানুষ আসায় স্থানীয়দের ব্যবসাতেও গতি এসেছে। দর্শনার্থীরা ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিলজুড়ে। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে জেলেদেরও। স্থানীয় জেলেরা হাওড়ে মাছ ধরা ছেড়ে এখন নৌকা বেয়ে বাড়তি আয় করছেন।

শরফরাজ, রফিক নামের বিল পাড়ের মাঝি জানান, প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি শুরু হয় এবং বিকেল পর্যন্ত চলে লোকজনের আনাগোনা। একজন মাঝি প্রতিদিন হাজার বারোশো বা তার চেয়েও বেশি আয় করছেন। বিলপাড়ে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান, যেখানেও বিক্রি-বাট্টা ভালো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শাপলা বিলে আসা জাপান প্রবাসী হায়দার নামে এক বাংলাদেশি দম্পতি শাপলা বিল দেখে অভিভূত হয়ে জানান, 'সত্যিই এ দেশ সোনার বাংলা।

তবে শাপলা বিল ঘুরে দেখা গেলো, স্থানীয় চাষিরা বোরো চাষের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে শাপলা তুলে জমি তৈরির কাজ করছেন। জানা গেলো, এ পুরো শাপলাবিল জুড়ে আরো কিছুদিনের মধ্যেই বোরো চাষাবাদ হবে। তখন হাওড় জুড়ে এমন শাপলা হাসি আর খোঁজে পাওয়া যাবে না।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জুড়ে থাকা প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের এ-হাওড় বন্যপ্রাণী, পাখি, আর স্থানীয় জাতের মাছে ভরপুর।


No comments