লক্ষ্মীপুরে মা-মেয়ের হত্যার রহস্য উন্মোচন: ফুফাতো ভাই গ্রেপ্তার
লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা:
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় অবশেষে উন্মোচন হয়েছে চাঞ্চল্যকর রহস্য। স্বর্ণালংকার লুটের উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে ভুক্তভোগীদেরই আত্মীয়— ফুফাতো ভাই পারভেজ। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকার তুরাগ থানা এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার আকতার হোসেন।
গ্রেপ্তার পারভেজ নিহত জুলেখা বেগমের ননদের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
পুলিশ জানায়, অভাবের তাড়নায় ও স্বর্ণের লোভে পারভেজ নিজের মামী জুলেখা বেগম (৪৫) ও মামাতো বোন তানহা আক্তার মীম (১৯)-কে নির্মমভাবে খুন করে। ঘটনার পর আলমারি ভেঙে প্রায় সাত ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায় সে।
গত ৯ অক্টোবর বিকেলে রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উত্তর চন্ডিপুর গ্রামের নিজ বাসায় মা ও মেয়েকে খুন করা হয়। নিহতরা হলেন স্থানীয় সোনাপুর বাজারের ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী ও সাবেক সেনা সদস্য মিজানুর রহমানের স্ত্রী ও কন্যা।
ঘটনার পর ক্লু-লেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি বিশেষ দল তদন্তে নামে। তদন্তে মিজানুর রহমানের ভাগিনা পারভেজের দিকে সন্দেহ যায় এবং পরে তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পারভেজ জানায়, দুই মাস আগে সে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসে। দেশে এসে ঋণ ও আর্থিক সংকটে পড়ে। তার একটি ব্যাংক হিসাব থেকে টাকাও তুলতে না পারায় সে স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন বিকেলে রামগঞ্জ শহর থেকে একটি ছুরি কিনে মামার বাড়িতে যায় পারভেজ। তখন বাড়িতে ছিলেন শুধু মামী ও মামাতো বোন। তারা তাকে ফল খেতে দেয়। সুযোগ বুঝে সে মীমকে দ্বিতীয় তলার কক্ষে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এরপর নিচে নেমে মামী জুলেখাকে উপরে ডেকে নেয়। তিনি উপরে উঠলে পেছন দিক থেকে প্লেট ও টি-টেবিল দিয়ে আঘাত করে এবং পরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
হত্যার পর শাবল দিয়ে আলমারি ভেঙে সাত ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালায় পারভেজ। পরে জামাকাপড় বদলে মামাতো ভাইয়ের পোশাক পরে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেয়।
পুলিশ জানায়, লুটকৃত স্বর্ণের প্রায় এক ভরি সে লক্ষ্মীপুরের দুটি দোকানে বিক্রি করে। বাকি ছয় ভরি স্বর্ণসহ ঢাকায় অবস্থান করছিল পারভেজ। গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে স্বর্ণালংকারগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

No comments