বগুড়া প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার বিভিন্ন বিনোদন পার্ক এখন যেন বিনোদনের জায়গা নয়, রীতিমতো আবাসিক হোটেলে রূপ নিয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পার্কে ঘুরতে যান, তারা বলছেন— পার্কের বিভিন্ন কোণে প্রেমিক-প্রেমিকাদের অশালীন আচরণে বিব্রত হচ্ছেন তারা।
চোখে পড়ে শুধু হাত ধরা বা আলিঙ্গন নয়, প্রকাশ্যেই অনেকে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন— যা একসময় কেবল প্রাণীদের মাঝেই দেখা যেত, এমন মন্তব্য করেছেন একাধিক দর্শনার্থী। এ চিত্রের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ, এমনকি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরাও।
বগুড়ার সাতমাথার নিকটবর্তী পৌর পার্কে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী জানান, “পরিবার নিয়ে পার্কে আসি, কিন্তু যেভাবে ছেলে-মেয়েরা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে— তাতে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের প্রতি আরও নজর দেওয়া।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার নামকরা মমইন ইকো পার্ক, গ্রীন রিসোর্ট, ওয়ান্ডারল্যান্ড, পৌর পার্কসহ আরও বেশ কয়েকটি পার্কে প্রতিনিয়ত চলছে এসব অসামাজিক কর্মকাণ্ড। পার্কের ভেতরে ক্যামেরা বা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করলেই বাধা দেন দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা। কেউ ছবি তুলতে গেলে মোবাইল পর্যন্ত কেড়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন ইসলাম তুহিন বলেন, “আমরা প্রায়ই শুনি ও দেখি পার্কে অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে। প্রশাসন ও পার্ক কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে তরুণ প্রজন্ম নৈতিক অবক্ষয়ের পথে ধাবিত হবে।”
এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান বাশির বলেন, “আমরা শিগগিরই পার্ক কর্তৃপক্ষকে ডেকে সতর্ক করব। পার্কে যেন কোনো অনৈতিক কার্যকলাপ না হয়, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকবে। এছাড়া স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীরা যেন স্কুলের সময় পার্কে না আসে, সেদিকেও নজর দেওয়া হবে।”
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে পার্ক কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও নোটিশ দিয়েছি। শিগগিরই এসব পার্কে নিরাপত্তা প্রহরী বাড়ানো ও নিয়মিত অভিযানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের মতে, “এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের পথে যাবে। বিনোদনের জায়গা যেন অশ্লীলতার আখড়া না হয়— সেই দাবি সবার।”
No comments