ফয়সাল হোসাইন সনি, বগুড়া
বগুড়ায় দূরপাল্লার যাত্রীবাহী ‘আর কে পরিবহন’-এর বাসে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন তথ্য। অভিযোগটি পরবর্তীতে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় রূপ নেয়। ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত বাসচালক সোহাইল হাসান শাকিব (২৬)-কে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভগ্নিপতি বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় দুইজনকে আসামি করে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলায় মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি উল্লেখ নেই, যা নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন ধোঁয়াশা।
পুলিশ ও মামলার তথ্য অনুযায়ী, ১৭ বছর বয়সী কিশোরীটি গত ১৩ অক্টোবর সকালে ঢাকায় থাকা এক বন্ধুর সঙ্গে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার কড্ডার মোড় থেকে বগুড়াগামী আর কে পরিবহনের বাসে ওঠেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাসটি বগুড়া শহরের বনানী মোড়ে পৌঁছালে অন্যান্য যাত্রী নেমে যান। তখন চালক সোহাইল ও হেলপার সৈকত (২২) কিশোরী ও তার বন্ধুকে নামতে নিষেধ করে।
একপর্যায়ে তারা কিশোরীর বন্ধুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নামিয়ে দেয় এবং মেয়েটিকে জোর করে বাসের ভেতরে আটকে রাখে। চালক সোহাইল তাকে পেছনের সিটে নিয়ে বোরকা খুলে ধর্ষণের চেষ্টা করে। চিৎকার করতে চাইলে মেয়েটির মুখ চেপে ধরা হয়।
পরে বাসটি শাজাহানপুর উপজেলার পর্যটন মোটেলের পশ্চিমে একটি গাড়ি ওয়াশের ডকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও ২–৩ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি যোগ দেয় এবং কিশোরীকে ভয় দেখিয়ে বলে বিষয়টি কাউকে না জানাতে। পরবর্তীতে তারা ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ডে এনে ঢাকাগামী বাসে তুলে দিতে চায়, কিন্তু মেয়েটি সাহস করে “আর কে ট্রাভেলস” কাউন্টারে গিয়ে বিষয়টি জানায়।
ঘটনার পর স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোরীর সঙ্গে কথা বললে সে জানায়, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে মালিকপক্ষ ও মোটরশ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে পুলিশ কিশোরীকে হেফাজতে নেয়। কিন্তু পুলিশের হেফাজতে আসার পর কিশোরী বলেন, তাকে ধর্ষণ নয়, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
ভিকটিমের সঙ্গে থাকা এক যুবক (যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “এক বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় হয়। আমাদের বিয়ের কথা চলছিল। সেদিন বগুড়ার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আর কে ট্রাভেলসের ড্রাইভার ও হেলপার আমাদের জিম্মি করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমাকে আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মুক্তি পাওয়ার পর মেয়েটি জানায়, তাকে ধর্ষণ করা হয়নি, বরং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।”
বগুড়া জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সোমবার টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা এলাকা থেকে প্রধান আসামি সোহাইল হাসান শাকিবকে গ্রেফতার করে শাজাহানপুর থানায় হস্তান্তর করেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া আসামীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি আমার জানা নেই। ভিকটিমের বন্ধুর সাথেও এখনো যোগাযোগ করা যায়নি।
No comments