সরুগ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকের অবাধ আড্ডা, প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার
কারিমুল হাসান, ধুনট, বগুড়া:
বগুড়ার ধুনট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম সরুগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরুগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কালেরপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ওসমান গনি মন্ডল তার মা তফুরুন নেছার জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাতার পর থেকে স্কুলটি সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছিল। সময়ের পরিবর্তনে স্কুলে নীতিগত পরিবর্তন ছাড়াও ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে প্রতিষ্ঠানের চাপাশের পরিবেশ। স্কুল ছুটির পর অধিকাংশ ক্লাস রুমে বিকালে বসতে থাকে মাদকের আড্ডা। মরহুম জুলফিকার আলী মাষ্টার তৎকালিন শিক্ষক ও পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকা অবস্থায় মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করে। প্রতিষ্ঠানে সিমানা প্রাচীর দেওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে মাদকের অভয়াশ্রম। বেশ কয়েকবার স্কুলের প্রাধানদের বিষয়টি অবগত করা হলে তারা স্থানীয়ভাবে মোকাবেলা করার কথা জানায়। পরবর্তিতে নোটিশ জারি করেও মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য থামাতে পারেনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যরতগন। বিকেল ৫টা থেকে শুরু করে রাত ১২টা কখনো কখনো রাত ২টা পর্যন্তও এলাকার মাদকসেবীদের স্কুলের ভিতর দেখা যায়। এমন কি স্কুলের বাড়ান্দায় বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালিয়ে অবাধে মাদক সেবন করতে থাকে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগন স্থানীয় ভাবে মাদকসেবীদের দমন করতে বরাবরই ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। গত ২ জুলাই সকাল অনুমান ১০ টায় সরুগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের উপর গাঁজা সেবন প্রস্তুতকরণ উপকরন দেখিতে পাইয়া কমলমতি শিক্ষার্থীরা ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে হস্তান্তর করে। তখন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আইনী সহযোগীতা ছাড়াই স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে বলে জানায়। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলিলে তিনিও স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করিবেন বলিয়া জানায়। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে তাহারদের পদক্ষেপের অগ্রগতি দৃশ্যমান না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ভিতরে মাদকসেবীদের আড্ডা দিবা রাত্রী বাড়তে থাকে। শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে এক ব্যাক্তি সরুগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বি-তল ভবনের নিচতলায় অফিস কক্ষের পাশের উন্মোক্ত স্টোর রুমে বসে ৪ মাদকসেবীর ইয়াাবা সেবনের ৪৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ ধারন করে।
জানা যায়, উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের শিয়ালি গ্রামের সোনাহাটাপাড়া এলাকার আমিনুল মন্ডলের ছেলে শহিদ এলাকার একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তিনি ইতিপূর্বে মাদক মামলায় বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছেন। জেল থেকে বের হয়ে সে পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে সরুগ্রাম এলাকায় মাদক বিক্রি করতে এসে স্থানীয় ৩ যুবককে সাথে নিয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে দ্রুত ওই মাদকসেবীরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, উপজেলার মধ্যে এই এলাকা মাদকের রেড জোন। প্রায় সময়ে এখানে বহিরাগতদের দেখা মেলে। এরা সবাই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিদের সাথে আসে এবং মাদক সেবন করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো মাদকের আখড়া এমন শিরোনামে বেশ কয়েকবার নিউজ হলেও টনক নড়েনি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পুলিশের। অথচ মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে মন্তব্য করে। অভিযোগ রয়েছে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রশাসন কখনও এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালায় না। এমনকি পুলিশই মাদক কারবারিদের থেকে মাসোয়ারা পান। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, প্রতিষ্ঠানের পশ্চিমে বিলের পাশে জঙ্গল বিশিষ্ট ঝাড়ের মধ্য নিয়মিত চলে মাদক সেবন। এছাড়াও মাদ্রাসার পুর্বপাশে কলাবাগানেও চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। ওই এলাকার পুর্বপাড়া নয়ামর্চা নামক স্থানে জমির ভিতর ও চাপড়া নদীর তীরবর্তী বটতলায় বসে মাদকের আসর।
এ বিষয়ে সরুগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, এর আগেও প্রতিষ্ঠানের ভিতরে মাদকসেবীদের আনাগোনা হতো। সেগুলো স্থানীয় ভাবে মিমাংশার চেষ্টা করেছি। তবে ভিডিও সংক্রান্ত বিষয়ে আমি অবগত নই।
এব্যাপারে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবহিত করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

No comments