শিরোনাম

বগুড়ায় শিশু বিকাশ কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের নির্যাতন ও থেরাপিস্টদের হয়রানি করার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বগুড়ায় প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসা ও বিকাশে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় অবস্থিত ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু শিশুদের মারধরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—হয়রানির শিকার হচ্ছেন থেরাপিস্টরাও। অনিয়ম-নির্যাতনের চিত্র প্রকাশ্যে আসায় অনেকে সন্তানদের ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির কেউই এসব অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

নামসর্বস্ব বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে এটি অলাভজনক, অথচ প্রতিটি শিশুর জন্য মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। এত টাকা নেওয়া সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মেলে না—বরং অভিযোগ আছে, মারধর, থেরাপি না দেওয়া, আবাসিক শিশুদের নিম্নমানের খাবার ইত্যাদি নিয়ে।


জয়পুরহাটের এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমার প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়মিত মারধর করা হতো। তার শরীরে আঘাতের দাগ ছিল। চুল ধরে টানা হতো। চোখের সামনে এসব দেখে মেয়েকে সরিয়ে নিয়েছি।”একাধিক থেরাপিস্ট জানিয়েছেন, শিশুদের উপর বর্বর নির্যাতন চালানো হতো তাদের চোখের সামনেই। স্পিচ থেরাপিস্ট সোলাইমান বলেন, “আমার সামনেই একাধিক শিশুকে এসএস পাইপ দিয়ে পেটানো হয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলে পরিচালক হাসতে হাসতে বলেন—‘থেরাপি দিচ্ছি।’”

ফিজিও থেরাপিস্ট ইলিয়াস আহম্মেদ নিশান জানান, “আমি আত্মীয় হয়েও ছাড় পাইনি। মারধরে আহত শিশুদের আমি চিকিৎসা দিতাম, আবার অভিভাবকদের ম্যানেজ করার দায়িত্বও আমার ছিল।”আরেক থেরাপিস্ট নুসরাত বলেন, “রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে শিশুদের মাথায় মারা হতো। প্রতিবাদ করলেই হুমকি দেওয়া হতো।”


প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করতে গিয়ে থেরাপিস্টদের পড়তে হয়েছে নানান হয়রানিতে। চাকরি ছেড়ে দেওয়া একাধিক থেরাপিস্ট জানান, নিয়োগপত্রের নামে তৈরি করা হয়েছে একপ্রকার ‘বন্দিত্বের চুক্তিপত্র’।

থেরাপিস্ট নুসরাত জানান, “আমার মূল সনদ আটকে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ফিরিয়ে চাইলে উল্টো প্রতারণার মামলা দিয়েছে।”

প্রতিষ্ঠানটির নাম এবং কার্যক্রম নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। প্রতিষ্ঠানটির বাইরে দুটি আলাদা নাম দেখা যায়—‘শিশু বিকাশ কেন্দ্র’ ও ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজেবিলিটি ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’। দুটি নামেই একই নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করা, যা সমাজসেবা কার্যালয় বলছে ‘প্রেরণা’ নামের একটি ভিন্ন সংগঠনের। অর্থাৎ, রেজিস্ট্রেশন নম্বরও জালিয়াতির আশ্রয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।


বগুড়া জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান জানান, “প্রেরণা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে আমরা নিবন্ধন দিয়েছি। তারা ভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান চালালে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সাল থেকে নানা চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিভাবকদের আকৃষ্ট করে। ভর্তি বাবদ নেওয়া হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। অথচ বাস্তবে কাঙ্ক্ষিত সেবা তো দূরের কথা, শিশুর নিরাপত্তা পর্যন্ত নেই।


এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা পরিচালক কেউই ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। পরিচালক জানান, “আমার অনুমতি নেই কিছু বলার।”


এমন ভয়াবহ অভিযোগের তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণে দেরি হলে আরও অনেক প্রতিবন্ধী শিশু ও তাদের পরিবারকে পড়তে হতে পারে চরম দুর্ভোগে।

No comments