শিরোনাম

বগুড়ার শেরপুরে ভুয়া ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে ভবনের নকশা: বিপদের মুখে গ্রাহকরা


 বগুড়ার শেরপুরে ভুয়া ইঞ্জিনিয়ার পরিচয়ে ভবনের নকশা: বিপদের মুখে গ্রাহকরা

বগুড়া ব্যুরো:

ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকৌশলগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাড়ি তৈরির জন্য মানুষ দ্বারস্থ হন ভালো মানের প্রকৌশলীর কাছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারিত হন ভুয়া প্রকৌশলীদের কাছে। এতে আর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি নিরাপত্তার হুমকিতে আছেন গ্রাহকেরা।

বগুড়ার শেরপুরে দেখা মিলেছে এমনই একজন প্রকৌশলী মোঃ আসাদুল ইসলামের। তিনি বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে জানান। এখন শেরপুরের বাস স্ট্যান্ড এলাকার একটি মার্কেটে পরিচালনা করছেন ‘ডিজাইন অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি কখনও রাজউকের নিবন্ধিত প্রকৌশলী, কখনও বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের (IEB) সদস্য, আবার কখনও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (IDE) এর সদস্য বলে পরিচয় দেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, তার প্রদত্ত তথ্যগুলো সত্য নয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাজউকের নিবন্ধন নম্বর ০৩৪৮ ব্যবহার করে আসাদুল নিজেকে নিবন্ধিত প্রকৌশলী হিসেবে দাবি করেন। অথচ রাজউকের ওয়েবসাইটে এই নম্বরের প্রকৃত মালিক মোহাম্মদ নূর-আল-ফেরদৌস। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের (IEB) সদস্য নম্বর ১৪৭৩৭ ব্যবহার করে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এই নম্বরের প্রকৃত সদস্য হলেন মুহাম্মদ সাকিল মিয়া। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (IDE) এর সদস্য নম্বর ৬৫৮৫৫ ব্যবহার করছেন, যার প্রকৃত মালিক মোঃ সামিম হোসেন।

উল্লেখিত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আসাদুলের ব্যবহৃত সদস্য নম্বরগুলি তাদের বলে তারা নিশ্চিত করেছেন। এ ধরনের প্রতারণায় তারা নিজেরাও বিব্রত ও শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার মুহাম্মদ সাকিল মিয়া বলেন, আসাদুল যে সদস্য নম্বর ব্যবহার করছেন, সেটি আমার। কিন্তু আমি তাকে চিনি না। তার এ ধরনের প্রতারণার কারণে আমিও হুমকির মুখে আছি। আরও ভালো করে খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

আসাদুলের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এমনই একজন উপজেলার গড়িদহ ইউনিয়নের বাসিন্দা শওকত শামীম। তিনি নিজেও একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী।

শামীম বলেন, “শেরপুরে বাড়ির নকশা তৈরি করার জন্য মানসম্মত প্রকৌশলী নেই। আমি আসাদুলের পদবি দেখে আকৃষ্ট হয়ে ২০২২ সালে ৪ তলা ভবনের নকশা তৈরি করিয়ে নিই। এর জন্য তাকে ১৬ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু ভবন তৈরির সময় নকশায় অনেক ত্রুটি লক্ষ করি। আমার বন্ধুদের সহযোগিতায় সেসব সংশোধন করিয়েছি। পরে অবশ্য আসাদুল তার ভুলের কথা স্বীকার করেন।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আসাদুল ইসলাম বলেন,”আমি বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লমা ও ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছি।“ তবে তিনি ভুয়া সদস্য ও নিবন্ধন নম্বর ব্যবহারের বিষয়ে গণমাধ্যমে কোন  ধরণের বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছেন।

এবিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “ভবনের নকশার সাথে আমাদের বিভিন্ন দপ্তরের পরিকল্পনার সম্পৃক্ততা আছে। যাদের সদস্য নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে বা যারা প্রতারিত হয়েছেন এমন কেউ আসাদুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।“

No comments